Friday, December 20, 2013

মেহেরপুরে যৌথবাহিনীর শ্বাসরুদ্ধকর ৫ ঘণ্টার অভিযান

রাজনগর, শেখপাড়া ও হিজুলী গ্রামে ৫ ঘণ্টার শ্বাসরুদ্ধকর অভিযান চালিয়েছে যৌথবাহিনী। গতকাল ভোর ৫টার দিকে এ অভিযান শুরু হয়ে চলে সকাল দশটা পর্যন্ত। অভিযানের শুরুতে বিজিবি, পুলিশ ও র‌্যাবের সদস্যরা রাজনগর, শেখপাড়া, হিজুলীসহ আশেপাশের গোটা এলাকা ঘেরাও করে। কয়েকটি দলে বিভক্ত হয়ে বিএনপি-জামায়াত কর্মীদের বাড়ি বাড়ি চিরুনি অভিযান চালায়। এতে ওই এলাকা পুরুষশূন্য হয়ে পড়ে। শেখপাড়ার আসকার আলীর স্ত্রী সেহেরা খাতুন জানিয়েছেন, অবিরাম গুলির শব্দে তাদের ঘুম ভাঙে। আতঙ্কে শিশুদের নিয়ে ঘরের এক কোণে পড়ে থাকেন। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে কয়েকজনকে আটক করে। গুলির বিষয়ে সদর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রিয়াজুল ইসলাম জানিয়েছেন, অভিযানকালে জামায়াত-বিএনপি নেতাকর্মীরা পুলিশের উপর ককটেল নিক্ষেপ করে। তাদের ছত্রভঙ্গ করতে গুলি ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করা হয়। অভিযানের সময় কয়েকটি বাড়িতে ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা।
তেমনই এক ক্ষতিগ্রস্ত শেখপাড়ার মিন্টু মিয়া। সরজমিন তার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় ঘরের তিনটি কক্ষের মধ্যে থাকা আসবাবপত্র, বিছানা ও কাপড়চোপড় সহ সব মালামাল আগুনে পুড়ে গেছে। তার স্ত্রী মাজেদা খাতুন জানিয়েছেন, তিন মেয়ে নিয়ে তিনি ঘরে শুয়ে ছিলেন। এ সময় কয়েকজন তার বাড়িতে এসে দরজা খুলতে বাধ্য করে। তারা সব জিনিসপত্র ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দিয়ে চলে যায়। সোনার গহনাসহ মূল্যবান জিনিসপত্র লুট হয়েছে বলেও জানান তিনি। সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় তিনি শুধুই কাঁদছিলেন। এক পর্যায়ে বললেন- আমাদের শরীরের পোশাক ছাড়া কিছুই অবশিষ্ট নেই। এখন আমরা কোথায় যাবো? কি করবো? আলেহীম মেম্বারের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় উঠানে কিছু জিনিসপত্র ও মালামাল পোড়া অবস্থায় রয়েছে। পাশে কান্নাকাটি করছেন কয়েকজন নারী ও শিশু। তারাও বর্ণনা করলেন অভিযান ও ভাঙচুরের ঘটনা। আলেহীম মেম্বারের শিশু কন্যা সুরাইয়া ইয়াছমিন জবা কেঁদে কেঁদে বলে, আমার মাকে আজকের মধ্যেই ফিরিয়ে দিতে হবে। অভিযানে আটক ৩৭ জনের মধ্যে জবার মা রয়েছেন। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, অভিযানের সুযোগ নিয়ে দুর্বৃত্তরা ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করেছে। ফাঁকা বাড়িতে লোকজন না থাকার সুযোগে তারা এই অত্যাচার করছে। স্থানীয় সূত্রে আরো জানা গেছে, শেখপাড়া বটতলা ক্লাবঘর, হানু মোল্লার মুদি দোকান, বারেক আলীর বাড়িতে ভাঙচুর এবং আলেহীম মেম্বার, মিন্টু মিয়া, রবিউল ইসলামের দোকান ও খড়ির গাদা এবং আজগর আলীর চায়ের দোকানে ভাঙচুর করে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। শেখপাড়ার ঘটনার পর আমঝুপি ইউনিয়ন জামায়াতের সেক্রেটারি আব্দুল জব্বারের হিজুলী গ্রামের বাড়িতে হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। ঘরের আসবাবপত্র সহ বিভিন্ন মালামাল ভাঙচুর করা হয়। অভিযান শেষ হলে জামায়াত-বিএনপি নেতাকর্মীরা জড়ো হয় হিজুলী গ্রামে। বেলা এগারটার দিকে হিজুলী গ্রামে আওয়ামী লীগ সমর্থিত তিন জনের দোকানে হামলা করে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে দুর্বৃত্তরা। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে বলে সদর থানা সূত্রে জানা গেছে।

http://mzamin.com/detailsarchive.php?mzamin=MzY1NA==&s=Mg==

No comments:

Post a Comment