Thursday, November 28, 2013

তৌফিক-ই-ইলাহীর বিরুদ্ধে ৩৫ কোটি টাকা ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ

১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল মহান স্বাধীনতা সংগ্রামে তাজউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বে গঠিত হয় মুজিবনগর সরকার। সেই বৈরী সময় তৎকালীন সরকারকে ১৭ এপ্রিল গার্ড অব অনার দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রীর সাবেক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী। মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাসে মুজিবনগর সরকারে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন তিনি। এ কারণে তাকে স্বাধীনতার সম্মানসূচক বীর বিক্রম খেতাবও দেওয়া হয়। পরে তিনি যোগ দেন সরকারের প্রশাসন বিভাগে। এরপর চাকরি থেকে অব্যাহতি নেওয়ার আগ পর্যন্ত বাংলাদেশের আমলাতন্ত্রে প্রভাবশালী ভূমিকা রাখেন ড. চৌধুরী। ২০০৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তিনি জ্বালানি সচিবেরও দায়িত্ব পালন করেন। তবে অভিযোগ রয়েছে, এখান থেকেই তার দুর্নীতির যাত্রা শুরু।

২০০৮ সালের ডিসেম্বরে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিজয় লাভ করার পর ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে সরকার গঠন করলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদবিষয়ক উপদেষ্টা করা হয় তৌফিক-ই-ইলাহীকে। তিনি হয়ে ওঠেন এই মন্ত্রণালয়ের একচ্ছত্র অধিপতি। তার বিরুদ্ধে বিদেশি কোম্পানির স্বার্থ দেখা, দুর্নীতিসহ বেশ কিছু অভিযোগ ওঠে গত পাঁচ বছরে। গণমাধ্যমে তিনি সমালোচিতও হন। এসব কারণে নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদের উপদেষ্টা থেকে তার নাম বাদ পড়ে।

শেভরন কেলেঙ্কারিতে ড. তৌফিক জড়িত : অভিযোগ রয়েছে, প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানিবিষয়ক উপদেষ্টা থাকাকালে তৌফিক-ই-ইলাহী মার্কিন বহুজাতিক কোম্পানি শেভরনকে ৫৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের (৩৭০ কোটি টাকা) একটি গ্যাস কমপ্রেসারের কাজ পাইয়ে দিয়ে মোটা অঙ্কের ঘুষ নিয়েছেন। তৌফিক-ই-ইলাহীর বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর কাছে লিখিত এ অভিযোগটি করেন পেট্রোবাংলার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পক্ষে জনৈক আবু সিদ্দিকী। অভিযোগটি প্রধানমন্ত্রী তদন্তের নির্দেশ দেন। তদন্তের জন্য জ্বালানি মন্ত্রণালয় পেট্রোবাংলার কাছে তদন্তের দায়িত্ব দিলেও তৌফিক-ই-ইলাহীর বিরুদ্ধে পেট্রোবাংলা কোনো তদন্ত না করে মন্ত্রণালয়ের কাছেই তদন্তের ভার ফিরিয়ে দেয়। পরে জ্বালানি মন্ত্রণালয় তদন্তের দায়িত্ব নেয়। তবে তৎকালীন জ্বালানি সচিব মোহাম্মদ মোহসিনের (২০১০ সালে দায়িত্বপ্রাপ্ত জ্বালানি সচিব) বিরুদ্ধেও অভিযোগ থাকায় এ তদন্তের কোনো ফলাফল আজো প্রকাশ হয়নি। এ বিষয়টি দৈনিক আমার দেশে প্রকাশিত হলে তৌফিক-ই-ইলাহীর পক্ষ থেকে ওই দৈনিকটির বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করা হয়। মামলায় পত্রিকাটির সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদক ও ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমান দীর্ঘ দিন কারাভোগ করেন।

অভিযোগে বলা হয়, জ্বালানি উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ এনামুল হক, সচিব মোহাম্মদ মোহসিন ও পেট্রোবাংলার সাবেক চেয়ারম্যান মোক্তাদির আলী পারস্পরিক যোগসাজশে আন্তর্জাতিক তেল-গ্যাস কোম্পানি শেভরনকে অপ্রয়োজনীয়ভাবে প্রায় ৩৭০ কোটি টাকার সমান ৫২ দশমিক ৭০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয়ে কমপ্রেসার স্টেশন বসানোর কাজ পাইয়ে দিয়েছেন। অভিযোগে বলা হয়, কাজটি শেভরনকে পাইয়ে দেওয়ার জন্য তৌফিক-ই-ইলাহী ৫ মিলিয়ন ডলার ঘুষ নিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর তদন্তের নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও গত চার বছরেও এ তদন্তকাজ শেষ হয়নি।

শেভরনকে কমপ্রেসার কেনার কাজ পাইয়ে দেওয়ার বিনিময়ে ৫ মিলিয়ন ডলার ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ প্রসঙ্গে গতকাল তৌফিক-ই-ইলাহীর ব্যক্তিগত মোবাইল ফোন নম্বরে কল করা হয়। তিনি কল রিসিভ করেননি। তবে জ্বালানি উপদেষ্টা থাকাকালে তিনি এ বিষয়ে বলেছিলেন, 'এ রকম একটি তথ্য প্রকাশ হওয়ার পর আমি দৈনিক আমার দেশের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করেছি। বেনামি একটা চিঠির ভিত্তিতে খবরের কাগজে এ রকম চরিত্রহননের কারণে আমি মানহানির মামলা করেছি। বিষয়টি বিচারাধীন রয়েছে।' এ বিষয়ে জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের তদন্ত সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'একটা উড়ো চিঠির ওপর, একটা বেনামি চিঠির ওপর; যার অস্তিত্ব নেই তার ওপর ভিত্তি করে সংবাদ প্রকাশিত হয়। মামলা বিচারাধীন রয়েছে।' এদিকে উইকিলিকসে ফাঁস হওয়া গোপন তারবার্তা থেকেও শেভরনের গ্যাস কমপ্রেসার কেনার সঙ্গে তৌফিক-ই-ইলাহীর সংশ্লিষ্টতার বিষয় জানা যায়। ২১ ডিসেম্বর, ২০১০ সালে ফাঁস হওয়া উইকিলিকসের এক গোপন তারবার্তায় (যার রেফারেন্স আইডি : 09DHAKA741) বলা হয়, চলমান জ্বালানি সংকট থেকে উত্তরণের একটা উপায় হতে পারে বাংলাদেশের প্রধান সরবরাহ লাইনে কমপ্রেসার যুক্ত করা, কমপ্রেসার যুক্ত করলে শেভরনের বিবিয়ানা গ্যাস ক্ষেত্র থেকে গ্যাস সরবরাহ বাড়বে। তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী জবাবে জানান, 'বাংলাদেশ শেভরনকে তিনটি কমপ্রেসারের মধ্যে একটি বসানোর অনুমোদন প্রদানের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছে।' উইকিলিকসের ফাঁস হওয়া গোপন তারবার্তার সূত্র ধরে দেশের জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শেভরনের কাছ থেকে একটি কমপ্রেসার কেনার ব্যাপারে আগেই মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে কথা দিয়েছিলেন তৌফিক-ই-ইলাহী। এ ব্যাপারে শেভরন তৌফিক-ই-ইলাহীকে মোটা অঙ্কের ঘুষ প্রদান করবে, এটাই স্বাভাবিক। এ প্রসঙ্গে তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্যসচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, পুরো বিষয়টিই হয়েছে অনিয়মের মধ্য দিয়ে। যদি নতুন একটি কমপ্রেসার মেশিন কেনা হয়, তাহলে বর্তমান তার বাজারমূল্য ৩৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। সেখানে পুরনো কমপ্রেসার মেশিন শেভরনের কাছ থেকে কিনেছেন প্রায় ৫৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে। এই ৫৩ মিলিয়ন ডলারের মধ্যে ১৮ মিলিয়ন তো সরাসরি বাড়তি। যেহেতু পুরনো মেশিন সেহেতু এর দাম ৩৫ মিলিয়ন ডলারও নয়। পেট্রোবাংলার এক কর্মকর্তার বরাতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে এ দুর্নীতি তদন্ত করার জন্য বিস্তারিত একটি চিঠি দেওয়া হয়েছে। আমরা যদি ওই চিঠির সূত্র ব্যবহার নাও করি, তাহলে পারিপার্শি্বক বিবেচনায় এটা বলা যায় যে এখানে বড় ধরনের দুর্নীতি হয়েছে। কারণ, যেখানে নতুন মেশিনের দাম ৩৫ মিলিয়ন ডলার, সেখানে ৫৩ মিলিয়ন ডলার খরচ করে পুরনো মেশিন কেনার কারণই হলো বড় ধরনের ঘুষের লেনদেন।

জানা গেছে, নাইকো কেলেঙ্কারির সঙ্গেও তৌফিক-ই-ইলাহীর সম্পর্ক রয়েছে। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তৌফিক-ই-ইলাহী জ্বালানি সচিবের দায়িত্ব পালন করেন। এ সময় তার বিরুদ্ধে কানাডিয়ান কোম্পানি নাইকো রিসোর্সকে ব্যাপক দুর্নীতির মাধ্যমে কাজ পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। এ অভিযোগে গত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে নাইকো মামলায় তৌফিক-ই-ইলাহীকে গ্রেফতার করা হয় ২০০৭ সালের ৯ ডিসেম্বর। নাইকো মামলায় তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল বিনা দরপত্রে নাইকোকে গ্যাস ক্ষেত্র বরাদ্দ দেওয়ার ফলে রাষ্ট্রের বিপুল ক্ষতিসাধন হয়েছে। উল্লেখ্য, একটি অভিজ্ঞতাহীন কোম্পানি নাইকো রিসোর্সকে টেংরাটিলায় গ্যাস উত্তোলনের কাজ দেওয়া হয়। পরে ওই কূপটিতে নাইকো আগুন ধরিয়ে দিলে ৭৫০ কোটি টাকার গ্যাস পুড়ে যায়।

এদিকে, মাগুরছড়ায় ১৯৯৭ সালে অক্সিডেন্টালের ক্ষতিপূরণ বাবদ ৩৫ হাজার কোটি টাকাও জ্বালানি উপদেষ্টার তদবিরে ক্ষমা করে দেওয়া হয়েছে মার্কিন কোম্পানি শেভরনকে। জানা যায়, ১৯৯৭ সালে মার্কিন কোম্পানি অক্সিডেন্টাল আগুন ধরিয়ে দিলে ভয়াবহ ক্ষতিসাধন হয় ওই গ্যাস কূপ এবং চারপাশের এলাকায়। এ কারণে বাংলাদেশের প্রায় ৩৫ হাজার কোটি টাকার মতো ক্ষতিসাধন হয়। অক্সিডেন্টাল থেকে ক্রমান্বয় হাত বদল হয়ে এলাকাটি বর্তমানে শেভরনের হাতে। তবে ক্ষতিপূরণ মাফ করে দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। বিপুল পরিমাণ আর্থিক ক্ষতি থেকে শেভরনকে রেহাই দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, শেভরনের কাছে যেন ক্ষতিপূরণ আদায় না করতে পারে এ জন্য তৌফিক-ই-ইলাহীর নির্দেশে মডেল পিএসসি, ২০০৮-এর অধীনে শেভরনকে মাফ করে দেওয়া হয়েছে। শেভরনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা জানায়, এ বিষয়ে তারা কোনো তথ্য দিতে বাধ্য নয়। কারণ এটা চুক্তিরই অংশ।

তৌফিক-ই-ইলাহীর তদবিরে সাগরের তেল-গ্যাস পেয়েছে বিদেশিরা : সাগরের তেল-গ্যাস মার্কিন আরেক কোম্পানি কনোকো-ফিলিপসে পাইয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত জে এফ মরিয়ার্টিকে। মরিয়ার্টি তৌফিক-ই-ইলাহীর দেওয়া প্রতিশ্রুতি ওয়াশিংটনে গোপন তারবার্তায় পাঠিয়ে দেন ২৯ জুলাই, ২০০৯ সালে। এ তারবার্তাটিও উইকিলিকস ফাঁস করে দিয়েছে। ২৯ জুলাই, ২০০৯ সালে পাঠানো তারবার্তায় মরিয়ার্টির বক্তব্য দিয়ে বলা হয়, রাষ্ট্রদূত সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানিবিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরীকে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু মীমাংসা করার ব্যাপারে তাগাদা দেন, যার মধ্যে গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য সাগরের গ্যাস ব্লক এবং কয়লা খনির অনুমোদনের বিষয় অন্তর্ভুক্ত। উপদেষ্টা ইঙ্গিত দিয়েছেন যে কনোকো-ফিলিপসকে সাগরের দুটি নির্বিরোধ গ্যাস ব্লক প্রদান করা হবে। তারবার্তায় আরও জানা যায়, ২৩ জুলাই, ২০১০-এর এক মিটিংয়ে জ্বালানি উপদেষ্টা কনোকো-ফিলিপসকে সাগরের দুটি বিরোধহীন গ্যাস ব্লক ইজারা দেওয়ার সম্ভাবনার কথা রাষ্ট্রদূতকে জানান। এ তারবার্তাটি উইকিলিকস একই সময় অর্র্থাৎ ২১ ডিসেম্বর ওপরের তারবার্তার সঙ্গে যুক্তভাবে প্রকাশ করে।

উইকিলিসে ফাঁস হওয়া তারবার্তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় ২০১১ সালের ২৩ মে সাগরের দুটি ব্লক কনোকো-ফিলিপসের কাছে ইজারা দেয়। এ চুক্তির মধ্য দিয়ে ৮০ শতাংশ গ্যাসের মালিকনা পেয়ে যায় মার্কিন কোম্পানি কনোকো-ফিলিপস। শুধু ৮০ শতাংশ মালিকানাই নয়, একই সঙ্গে গ্যাস রপ্তানিরও সুযোগ পেয়েছে কোম্পানিটি।

এ সম্পর্কে বাংলাদেশ প্রতিদিনের পক্ষ থেকে তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী জ্বালানি উপদেষ্টা থাকাকালে জানতে চাওয়া হয়েছিল। তিনি তখন বলেছিলেন, 'কনোকো-ফিলিপস একটি মুক্ত প্রতিযোগিতার মাধ্যমে সিলেকটেড (কাজ পেয়েছে) হয়েছে। এ সিলেকটেডের মাধ্যমে তারা অনেক ব্লক চেয়েছিল। কিন্তু বাকিগুলোর ওপর মিয়ানমার ও ভারতের ওভারলেপিং কেলেইম আছে। এ কারণে ওগুলো বাদ দিয়ে মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে কনোকো-ফিলিপসকে ওই দুটো ব্লক দেওয়া হয়েছে। যেটা শুরু হয়েছিল বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়।' উইকিলিকসের ফাঁস হওয়া তারবার্তার সঙ্গে কনোকো-ফিলিপসের সাগরে গ্যাস ব্লক পাওয়ার কোনো সম্পর্ক আছে কি না- জানতে চাইলে তখন তৌফিক-ই-ইলাহী আরও বলেছিলেন, 'উইকিলিকসে কী তথ্য ফাঁস হয়েছে জানি না। সত্য হলো মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে তারা কাজ পেয়েছে।' জ্বালানি উপদেষ্টার পদ থেকে বিদায় নেওয়ার আগেই অগভীর সমুদ্রের ৭ নম্বর ব্লকটি কনোকো-ফিলিপসকে দেওয়ার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ব্যাপারে প্রধান ভূমিকা রাখেন তৌফিক-ই-ইলাহী। আগামী ২ ডিসেম্বর কনোকো-ফিলিপসের সঙ্গে ৭ নম্বর ব্লকের উৎপাদন বণ্টন চুক্তি (পিএসসি) স্বাক্ষর করবে পেট্রোবাংলা।

কনোকো-ফিলিপসের সাগরে একাধিক ব্লক পাওয়া সম্পর্কে মহাজোটের অন্যতম শরিক দল বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির পলিটব্যুরো সদস্য বিমল বিশ্বাস বলেন, 'বাংলাদেশের খনিজ সম্পদ যারা বিদেশিদের হাতে তুলে দিতে চায় তারা জাতীয় স্বার্থবিরোধী ব্যক্তি। দেশ, জাতি, জনগণের স্বার্থ বিকিয়ে দিতে তাদের বাধে না।' তিনি আরও বলেন, 'তৌফিক-ই-ইলাহী হলেন সাম্রাজ্যবাদের এ-দেশীয় এজেন্ট। তিনি আমাদের দেশের জাতীয় সম্পদ বিদেশিদের হাতে তুলে দিতে চান। তাকে অবিলম্বে বিচারের মুখোমুখি করা উচিত।'

এশিয়ান এনার্জির পক্ষে তৌফিক-ই-ইলাহীর ওকালতি : দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে উন্মুক্ত কয়লা খনির প্রতিবাদে ২০০৬ সালের ২৬ আগস্ট পুলিশ ও বিডিআরের (বর্তমানে বিজিবি) গুলিতে তিনজন নিহত হন। তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনা আন্দোলনরত জনগণের ৬ দফার সঙ্গে একাত্দতা ঘোষণা করে বলেছিলেন, 'আওয়ামী লীগ যদি ক্ষমতায় যায় ফুলবাড়ীতে কোনোভাবেই উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা খনি হবে না।' তবে অভিযোগ উঠেছে, তৌফিক-ই-ইলাহী নিজ দলের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির সঙ্গে বেইমানি করে এশিয়ান এনার্জির পক্ষে উন্মুক্ত কয়লা খনি করার লক্ষ্যে একাধিকবার তদবির করেছেন। তৎকালীন মার্কিন রাষ্ট্রদূত মরিয়ার্টি এশিয়ান এনার্জিকে উন্মুক্ত কয়লা খনি করার অনুমতি দেওয়ার জন্য তৌফিক-ই-ইলাহীকে অনুরোধ করেন। ২১ ডিসেম্বর, ২০১০ সালে ফাঁস হওয়া উইকিলিকসের ওই গোপন তারবার্তায় জানা যায়, ফুলবাড়ীর জমিতে দরিদ্র এবং ঐতিহাসিকভাবে শোষিত উপজাতীয় জনগোষ্ঠীর বসতি থাকায় প্রস্তাবিত কয়লা খনি প্রকল্পটির সিদ্ধান্ত রাজনৈতিকভাবে বেশ স্পর্শকাতর বলে জ্বালানি উপদেষ্টা (ড. তৌফিক-ই-ইলাহী) মন্তব্য করেন। তিনি (ড. ইলাহী) বলেন, 'সরকার স্থানীয় সম্প্রদায়ের অধিকার রক্ষার উপায় বের করবে এবং সংসদীয় পদ্ধতিতে প্রকল্পটির পক্ষে সমর্থন তৈরি করবে।'

এ বিষয়ে বিমল বিশ্বাস বলেন, 'এশিয়ান এনার্জি পাবে ৯৪ ভাগ আর দেশের পরিবেশ-প্রতিবেশ ধ্বংস করে বাংলাদেশ তার নিজের কয়লার পাবে মাত্র ৬ ভাগ! এ রকম কোনো অসম চুক্তি জনগণ কখনই মেনে নিতে পারে না।'

- See more at: http://www.bd-pratidin.com/2013/11/29/29129#sthash.6t0tyLzB.dpuf

No comments:

Post a Comment