Thursday, November 21, 2013

সীতাকুণ্ডে জামায়াত নেতা আমিনুলের জানাজা অনুষ্ঠিত : ফেরার পথে ছাত্রলীগের গুলি ও কোপে আহত ৪, ফের উত্তেজনা

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হওয়ার পর নৃশংস কায়দায় খুন হওয়া চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের জামায়াত নেতা আমিনুল ইসলামের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। জানাজা শেষে ফেরার পথে যুবলীগ-ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীরা গুলি করে ও কুপিয়ে আহত করেছে জামায়াত-শিবিরের ৪ নেতাকর্মীকে।
গুলিবিদ্ধদের মধ্যে রয়েছে শিবিরের মিরসরাই উপজেলা সভাপতি তৌহিদুল ইসলাম, শিবিরের সাথী জাহেদ ও কর্মী শাহিন। তিনজনের অবস্থাই আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে। এছাড়া যুবলীগ-ছাত্রলীগের উপর্যুপরি কোপে জখম হয়েছেন মিরসরাই উপজেলা জামায়াতের আমির নুরুল ইসলাম।
ঘটনা জানাজানি হলে গতকাল ফের জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীদের মাঝে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। জামায়াত নেতা আমিনুল ইসলামের হত্যাকারী ও জানাজা শেষে বাড়ি ফেরার পথে নেতাকর্মীদের ওপর হামলাকারীদের গ্রেফতারে দু’দিনের আলটিমেটাম দিয়েছেন জামায়াত-শিবির নেতারা। এর মধ্যে গ্রেফতার না হলে রোববার চট্টগ্রামজুড়ে সকাল-সন্ধ্যা হরতালের হুশিয়ারি দিয়েছেন তারা।
এর আগে গতকাল দুপুর ২টায় গতকাল দুপুর ৩টায় বাড়বকুণ্ড ঈদগা মাঠে নিহত আমিনুল ইসলামের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী অংশ নেন।
প্রসঙ্গত, রোববার কুমিল্লা থেকে অপহৃত হওয়া বাড়বকুণ্ড ইউনিয়ন জামায়াতের সেক্রেটারি আমিনুল ইসলামের লাশ গুলিবিদ্ধ অবস্থায় উদ্ধার করে সীতাকুণ্ড থানা পুলিশ। অপহরণের ৩ দিন পর বুধবার দুপুরে উপজেলার পৌর সদরের পন্থিছিলা কসাইখানা সংলগ্ন ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পশ্চিম পাশ থেকে পুলিশ লাশটি উদ্ধার করে সুরতহাল শেষে লাশ মর্গে পাঠায়। গতকাল দুপুরে বাড়বকুণ্ড ইউনিয়নের মান্দারীটোলা গ্রামে নিহতের নিজ বাড়িতে তার লাশ নেয়া হয়। বিকাল ৩টায় বাড়বকুণ্ড ঈদগা ময়দানে জানাজা শেষে তাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।
জানাজায় উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম মহানগর জামায়াতের আমির শামসুল ইসলাম এমপি, উত্তর জেলা জামায়াতের আমির অধ্যক্ষ আমিরুজ্জামান, উপজেলা আমির শফিকুল মাওলা, উপজেলা সেক্রেটারি আবু তাহের, পৌর জামায়াত সভাপতি তৌহিদুল ইসলামসহ হাজার হাজার নেতাকর্মী ও এলাকাবাসী।
উত্তর জেলা জামায়াতের আমির অধ্যক্ষ আমিরুজ্জামান জানাজার আগে এক সংক্ষিপ্ত ভাষণে বলেন, আগামীকাল (শুক্রবার) দোয়া দিবস ও শনিবার বৃহত্তর চট্টগ্রামে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। যদি প্রশাসন শনিবারের মধ্যে আসামিদের গ্রেফতার করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে রোববার থেকে হরতালসহ কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
এদিকে মিরসরাই উপজেলার ছোট কমলদহ এলাকায় আমিনুল ইসলামের জানাজা শেষে বাড়ি ফেরার পথে মিরসরাই জামায়াতের আমির নুরুল করিম ও মিরসরাই উপজেলা শিবির সভাপতি তৌহিদুল ইসলামসহ চারজনকে আওয়ামী যুবলীগ-ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীরা গুলি করে গুরুতর আহত করার খবর সীতাকুণ্ডে ছড়িয়ে পড়লে পুরো উপজেলাজুড়ে আবারও জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীদের মধ্যে চরম উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। যে কোনো সময় আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
উপজেলা জামায়াতের সাধারণ সম্পাদক নুরুল কবির জানান, সীতাকুণ্ডে নিহত জামায়াত নেতা মুহাম্মদ আমিনুল ইসলামের জানাজা শেষে সিএনজি অটোরিকশায় করে মিরসরাই উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর আমির নুরুল করিম, ছাত্রশিবির সভাপতি তৌহিদুল ইসলাম ও শিবিরকর্মী জাহেদুল ইসলাম ছোট কমলদহ যাচ্ছিলেন। তাদের অটোরিকশার পেছনে পেছনে বড় দারোগারহাট থেকে ছাত্রলীগ কর্মীদের আরেকটি অটোরিকশা ধাওয়া করে। ছোট কমলদহ বাজারের কাছাকাছি গেলে অটোরিকশাটি রাস্তার পূর্বদিকে উল্টে যায়। এ সময় জামায়াত নেতাদের অটোরিকশা লক্ষ্য করে গুলি ছুড়ে ছাত্রলীগ কর্মীরা তাদের টেনে-হিচড়ে বের করে উপজেলা ছাত্রশিবির সভাপতি তৌহিদুল ইসলাম, জাহেদুল ইসলাম ও শাহিনকে গুলি করে। এ সময় অটোরিকশা থেকে দৌড়ে পালানোর সময় উপজেলা জামায়াতের আমির নুরুল করিমকে একজন ধরে রেখে ৭-৮ জন কুপিয়ে আহত করে। স্থানীয়রা আহত অবস্থায় তাদের উদ্ধার করে ফেনীর একটি হাসপাতালে নিয়ে যায়।
আহত উপজেলা জামায়াতের আমির নুরুল করিম মোবাইলফোনে জানান, ছাত্রশিবির সভাপতি তৌহিদুল ইসলামের বুকে গুলি লেগেছে। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক।
মিরসরাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইমতিয়াজ ভূঞা বলেন, হামলার ঘটনা শুনে ঘটনাস্থলে এলেও এখানে কাউকে পাওয়া যায়নি। আমরা বিষয়টি তদন্ত করে দেখছি।
এদিকে হরতালে নাশকতার অভিযোগে সীতাকুণ্ড মডেল থানা পুলিশ উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে ৪ জনকে গ্রেফতার করে।

No comments:

Post a Comment