Wednesday, September 4, 2013

ছাত্রলীগ নেতার কাণ্ড: চাঁদা না পেয়ে দরজা-জানালা বিক্রি

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর থেকে: লাখ টাকার চাঁদা আদায়ে ব্যর্থ হয়ে যশোর জেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আহসানুল করিম ওরফে রহমান তার বাহিনী দিয়ে শহরের সার্কিট হাউজ পাড়ার এক ব্যবসায়ীর মালিকানাধীন ছাত্র হোস্টেলের দরজা-জানালা খুলে নিয়ে বিক্রি করে দিয়েছে। বাড়ি থেকে নামিয়ে দিয়েছে সব ভাড়াটিয়াকে। গত এক সপ্তাহ আগের এই ঘটনাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে ছাত্রলীগ নেতার নেতৃত্বে ওই বাড়িতে দফায় দফায় চালানো হয়েছে বোমা হামলা। সন্ত্রাসীদের অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে ওই ব্যবসায়ী ব্রেন স্ট্রোক করে এখন হাসপাতালে মৃত্যুর প্রহর গুনছেন। তার ছেলে-মেয়েরা সন্ত্রাসীদের ভয়ে স্কুল-কলেজে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। এদিকে ঘটনাটি মিডিয়া কর্মীদের নজরে এলে তড়িঘড়ি করে কোতোয়ালি থানার করিৎকর্মা পুলিশ ছাত্রলীগ নেতা রহমানকে আটক করেছে। যশোর শহরের সার্কিট হাউজপাড়ার বাসিন্দা ব্যবসায়ী এএসএম নুরুল ইসলাম। তার স্ত্রী সালমা ইসলাম জানান, গত রোজার ঈদের ১০-১২ দিন পর রহমান, সুজনসহ ৮-১০ যুবক অস্ত্র নিয়ে তার বাড়িতে যায় এবং নুরুল ইসলামকে ঘরের বাইরে ডেকে এক লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। নুরুল ইসলাম টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে তারা তাকে মারপিট করে বাড়ির সামনে ফেলে চলে যায়। ওই দিন রাত দেড়টার দিকে নুরুল ইসলাম ব্রেন স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। সঙ্গে সঙ্গে তাকে যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তারপর উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নেয়া হলেও তার অবস্থার কোন উন্নতি হয়নি।
এই অবস্থায় গত মঙ্গলবার রাতে ছাত্রলীগ নেতা রহমান তার ক্যাডারদের নিয়ে নূরুল ইসলামের মালিকানাধীন ছাত্র হোস্টেলের ৯টি জানালা ও ১০টি দরজা খুলে নিয়ে বিক্রি করে দিয়েছে। শুধু তাই নয়, নুরুল ইসলামের চারতলা আরেকটি বাড়ি থেকে সব ভাড়াটিয়াকে জোর করে নামিয়ে দিয়েছে। ফলে ওই পরিবারটির আয়ের পথ বন্ধ হয়ে গেছে। নিজেদের বাড়িতে সন্ত্রাসীদের ভয়ে ঘরের নিচতলার একটি ঘরে জানালা-দরজা বন্ধ করে কোন রকমে বেঁচে আছেন নুরুল ইসলামের স্ত্রী সালমা ইসলাম ও তার সন্তানরা। তার তিন মেয়ে ও এক ছেলের লেখাপড়াও বন্ধ করে দিয়েছে রহমান বাহিনীর ক্যাডাররা। তারা হুঙ্কার দিয়ে জানিয়েছে, কেউ বাড়ির বাইরে বের হলে এসিড মেরে তাদের চোখ মুখ ঝলসে দেয়া হবে। ভয়ে ছেলেমেয়েদের স্কুল-কলেজে যাওয়া বন্ধ করে দেন সালমা ইসলাম। এব্যাপারে গতকাল বুধবার কোতোয়ালি থানায় লিখিত অভিযোগ করেন তিনি। মুহূর্তে ঘটনাটি চাউর হয়ে যায় বিভিন্ন মহলে। মিডিয়া কর্মীরা ছুটে যান ঘটনাস্থলে। এলাকাবাসী জানান, সন্ত্রাসী রহমান বাহিনীর অত্যাচারে এলাকায় কারও টুঁ- শব্দটি করার উপায় নেই। তাদেরকে চাঁদা না দিয়ে কেউ বাড়িঘর নির্মাণ করা তো দূরের কথা ইট-বালি পর্যন্ত ফেলতে পারে না। ছেলেমেয়ের বিয়ে দিতে হলেও এই বাহিনীকে চাঁদা না দিয়ে পার পাওয়ার উপায় নেই। এব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন বিপুল জানান, কে ছাত্রলীগ নেতা আর কে যুবলীগ নেতা তা বড় বিষয় নয়। যে অপরাধ করবে তার উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। দলের বা পদের নাম ভাঙ্গিয়ে যে বা যারা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করছে, চাঁদাবাজি করছে, মানুষকে জিম্মি করে তাদের সর্বস্ব লুট করছে, তাদের কোন আদর্শ নেই। এসব অপকর্মের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন তিনি। এ বিষয়ে কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি এমদাদুল হক শেখের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, ঘটনার বিষয়ে জেলা ছাত্রলীগের নেতা রহমানের নামে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি তদন্তের জন্য একজন সাব ইন্সপেক্টরকে ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়েছে। তদন্তে দোষী প্রমাণিত হলে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। এদিকে এই রিপোর্ট লেখার সময় অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা রহমানকে কোতোয়ালি পুলিশ আটক করেছে। তবে স্থানীয়রা বলছেন- এটা পুলিশের আইওয়াশ। ক’দিন পরেই সব ঠিক হয়ে যাবে। আজ সাংবাদিকরা ঘটনাটি নিয়ে তোলপাড় করায় পুলিশের টনক নড়েছে। এই বাহিনীর বিরুদ্ধে এর আগেও এলাকার বহু মানুষ লিখিত অভিযোগ করলেও ক্ষমতাসীন হওয়ার কারণে পুলিশ কোন অ্যাকশনে যায়নি। উপরন্তু দিনের বেশির ভাগ সময় কোতোয়ালি থানার একাধিক দারোগাকে রহমান ও তার ক্যাডারদের সঙ্গে এম এম কলেজ ও এর আশপাশে সার্বক্ষণিক আড্ডা মারতে দেখা গেছে। অনেকে অভিযোগ করেন, রহমান একজন মাদকসেবী। সে নিয়মিত ফেনসিডিল সেবন করে। তার ডেরায় বসে অনেককে ফেনসিডিল সেবনসহ স্কুল-কলেজগামী মেয়েদের টিজ করতে দেখা যায়। এদিকে বাহিনী প্রধান রহমান আটকের খবরে গতকাল বিকালে সরকারি এম এম কলেজ, সার্কিট হাউজপাড়া ও এর আশপাশের এলাকার বাসিন্দারা মিষ্টি বিতরণ করেন। একই সঙ্গে ছাত্রলীগের পুরাতন হল শাখা ও জেলা ছাত্রলীগের একাধিক নেতা রহমানকে ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কারের দাবি জানান। এদিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ছাত্রলীগ নেতা রহমানকে গতকাল বিকালেই ডিবি পুলিশের হেফাজতে নেয়া হয়েছে। সেখানে এসপি জয়দেব কুমার ভদ্রসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা রহমানকে জিজ্ঞাসাবাদ করে প্রকৃত ঘটনা জানার চেষ্টা করেন। ডিবি’র ওসি মনিরুজ্জামান বলেন, রহমান যে ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছে তা মধ্যযুগীয় বর্বরতাকে হার মানিয়েছে। এই বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে এই ঘটনার পিছনে কার ইন্ধন ছিল বা কার জোরে সে এ ধরনের জঘন্যতম ঘটনা ঘটানোর সাহস দেখিয়েছে তা খতিয়ে দেখার জন্যই তাকে গোয়েন্দা পুলিশের  হেফাজতে নেয়া হয়েছে।

No comments:

Post a Comment