Tuesday, September 10, 2013

ভাঙচুরের নাম ছাত্রলীগ





॥ ২ শতাধিক গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত * সড়ক বন্ধ ছিল ৪ ঘণ্টা ॥
সহিদুল করিম বিপ্লব, রূপগঞ্জ : নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটি ভেঙে নতুন কমিটি গঠনের প্রতিবাদে গতকাল মঙ্গলবার স্থানীয় ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক এবং ঢাকা বাইপাস সড়ক অবরোধ করে ৪ ঘণ্টা ধরে তা-ব চালিয়েছে। প্রথমে তারা সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে ও গাছের গুঁড়ি ফেলে অবরোধ করে। পরে সড়কে আটকাপড়া ২ শতাধিক গাড়ি ভাঙচুর করে ওই এলাকায় ত্রাস সৃষ্টি করে। চালায় বাসে-বাসে লুটপাট। দুপুর ১টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে তাদের এ তা-ব। শুধু সড়ক অবরোধই করেনি উত্তেজিত ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা। তারা শীতলক্ষ্যা নদীর রূপগঞ্জ ফেরি চলাচলও বন্ধ করে দিয়ে দুর্ভোগে ফেলে মানুষকে। ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের তা-বের কবলে পড়ে বাইপাস সড়ক ও মহাসড়কের উভয়দিকে ১৪ কিলোমিটার যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে বাসযাত্রীরা পড়েন চরম ভোগান্তিতে। বিশেষ করে নারী ও শিশু। উত্তেজিত নেতা-কর্মীদের সড়ক থেকে হটাতে গিয়ে তাদের তোপের মুখে পড়ে ইট-পাটকেল খেতে হয় পুলিশকেও। এ নিয়ে সেখানে নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। পরে লাঠিচার্জ করে বিকাল ৪টায় পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এর ১ ঘণ্টা পর ফের যানবাহন চলাচল শুরু হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সংঘর্ষকালে পুলিশের লাঠিপেটায় ১১ ছাত্রলীগ নেতা-কর্মী আহত হন। এদের মধ্যে ছাত্রলীগনেতা আনোয়ার পারভেজ টিপু, আজিম খন্দকার, আবুল কালাম, আবু সালাম, রনি, দুর্জয় ও শান্তকে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সংঘর্ষের সময় উপজেলা ছাত্রলীগের ভেঙে দেওয়া কমিটির সভাপতি মাসুম চৌধুরী অপু, ছাত্রলীগেনেতা হামজালা ও আবদুল্লাকে আটক করলেও ২ ঘণ্টা পর পুলিশ তাদের ছেড়ে দেয়। রূপগঞ্জের ভুলতা, গোলাকান্দাইল, সাওঘাট, আধুরিয়া, পোনাব, কেশাব, কালাদী ও কাঞ্চন এলাকায় তা-বকালে পুলিশ উত্তেজিত ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের শান্ত হতে বার-বার অনুরোধ করেন। কিন্তু পুলিশের অনুরোধ উপেক্ষা করেই তারা নির্বিচারে গাড়ি ভাঙচুর করতে থাকে। এর একপর্যায়ে পুলিশ তাদের সড়ক থেকে হটাতে ধাওয়া করলে তারা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। পরে লাঠিপেটা করে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ সময় বাইপাস সড়ক ও মহাসড়কের উভয়দিকে ১৪ কিলোমিটার যানজটের সৃষ্টি হয়। বিভিন্ন যানবাহনে থাকা যাত্রীরা পড়েন বিপাকে। ঘটনায় আতঙ্কিত বাসযাত্রীদের অনেকেই এসময় বাস থেকে নেমে নিরাপদ দূরত্বে আশ্রয় নেন। ছোটাছুটি করতে থাকেন দিগ্বিদিক।
গাজীপুরগামী ট্রাকচালক মফিজুল ইসলাম বলেন, অবরোধকারীরা যানবাহন ভাঙচুর করে চালক, হেলপার, কন্ডাক্টর ও যাত্রীদের মারধর করে নগদ টাকা, মোবাইল সেট লুটে নেয়। এ সময় বিপুলসংখ্যক যানবাহন ভাঙচুর করা হয়। তার ভাষ্য, ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের এরকম তা-ব এর আগে কখনও দেখেননি।
উপজেলা ছাত্রলীগের ভেঙে দেওয়া কমিটির সভাপতি মাসুম চৌধুরী অপু ও সাধারণ সম্পাদক আমিনুল হক খোকন আমাদের সময়কে বলেন, গত ২৩ জানুয়ারি রূপগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটি গঠন করা হয়। সংসদ সদস্য গোলাম দস্তগীর গাজীর কথামতো তার পক্ষে অন্যায়, অনিয়ম না করায় তিনি ছাত্রলীগ নেতাদের ওপর ক্ষিপ্ত হন। এর জের ধরেই অনিয়মতান্ত্রিক ও গঠনতন্ত্রবহির্ভূতভাবে গত ৯ সেপ্টেম্বর কেন্দ্রীয় কমিটির মাধ্যমে রূপগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটি ভেঙে দেওয়া হয়। হত্যাসহ বিভিন্ন মামলায় ছাত্রলীগের নেতাদের জড়ানো হবে বলে রূপগঞ্জ থানার ওসি হুমকি দেন। যাত্রী ও চালকদের টাকা, মোবাইল সেট লুটপাটের ঘটনা তারা অস্বীকার করেন।
নবগঠিত উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি হাসিবুর রহমান হাছিব ও সাধারণ সম্পাদক হাফিজুর রহমান সজিব জানান, সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজিসহ নানা অনিয়মের অভিযোগে পুরনো কমিটি ভেঙে ৬ সদস্যবিশিষ্ট নতুন কমিটি গঠন করা হয়েছে। গত ৯ সেপ্টেম্বর ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি রূপগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের নতুন কমিটির অনুমোদন দিয়েছে। শিগগিরই পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হবে।
রূপগঞ্জ থানার ওসি আসাদুজ্জামান মীর জানান, রূপগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটি ভেঙে দেওয়াকে কেন্দ্র করে মহাসড়ক ও বাইপাস সড়কে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা তা-ব চালায়। পরে সড়কে বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পরিস্থিতি এখন শান্ত। এ ব্যাপারে রূপগঞ্জ থানায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।
http://www.amadershomoybd.com/content/2013/09/11/middle0512.htm

No comments:

Post a Comment